কাম্বোডিয়া, ভিয়েতনাম ইত্যাদি দেশের বিভিন্ন শিলালেখে একটি কাহিনী বারবার ফিরে আসে, এর অনেক পরে আঙ্কোর এবং খারমে সাম্রাজ্যদুটির উত্থান ঘটেছিল, কিন্তু গল্পটা এইরকম – কৌন্ডিণ্য নামে এক ভারতীয় ব্রাহ্মণ একসময় বর্তমানদক্ষিণ ভিয়েতনাম এবং দক্ষিণ কাম্বোডিয়ার মেকং অঞ্চলের উপকূল বরাবর জলপথে যাচ্ছিলেন, এবং তাঁর উপর আক্রমণ করা হয়, তিনি জাহাজে ছিলেন, তিনি তাঁর বণিকদের সাথে জাহাজে ক’রে যাচ্ছিলেন এবং তিনি কিছু জলদস্যুদের দ্বারা আক্রান্ত হন, কিন্তু তিনি ছিলেন বীরপুরুষ, তাই তিনি সেই জলদস্যুদের যুদ্ধে পরাস্ত করেন এবং তাড়িয়ে দেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশতঃ হয় কি, এসবের ফলে জাহাজটা ফুটো হয়ে যায় এবং তিনি ও তাঁর দলবল সেটিকে সারানোর চেষ্টায় ডাঙায় নিয়ে যেতে বাধ্য হন। যখন তাঁরা সারাইয়ের কাজ করছেন, তখন স্থানীয় নাগপূজক উপজাতির লোকেরা তাঁদের দেখতে পায় এবং আক্রমণ করবে ব’লে স্থির করে। স্বাভাবিকভাবেই উপজাতীয়েরা তাঁদের ঘিরে ফেলে এবং আবারও কৌন্ডিণ্য তরবারি বের ক’রে নিজের বীরত্ব প্রদর্শন করে আত্মরক্ষায় তৎপর হন। নাগপূজক জাতির রাজকন্যা তাঁকে দেখেতাঁর প্রেমে প’ড়ে যান – তাঁর নাম হ’ল, বিভিন্ন কিংবদন্তী অনুযায়ী তাঁর নানান নাম রয়েছে, কিন্তু যে নামতি বারবার ব্যবহৃত সেটি হচ্ছে সোমা –সেই সোমা, অর্থাৎ যাঁর চাঁদের মতো মুখ, কৌন্ডিণ্যকে দেখে তাঁর প্রেমে পড়েন এবং বিয়ের প্রস্তাব দেন, এবং আমার মনে হয় কৌন্ডিণ্য অন্য কোনো উপায় না দেখতে পেয়ে তাঁকে বিয়ে করেন এবং একটি রাজবংশের সূচনা করেন, যা কিনাশেষ পর্যন্ত,অনেক অনেক পরে, আঙ্কোর এবং খ্মেরের মতো মহান সভ্যতা, এবং অবশ্যই দক্ষিণ ভিয়েতনামের খারমে সভ্যতার স্থাপনা করে।
এ ব্যাপারে যা আরো চিত্তাকর্ষক, সেটি হচ্ছে এইসব বংশগুলির বেশিরভাগই মাতৃকুলভিত্তিক, মাতৃতান্ত্রিক নয়। এঁরা নিজেদের বংশগণনা করেন বংশজ নারীদের সূত্র ধ’রে, যা কিনা স্বাভাবিক– কারণ স্ত্রী-র সূত্রেই কৌন্ডিণ্যের রাজত্বে উত্থান সম্ভব হয়েছিল, এবং এটি খুবই আকর্ষণীয় একটি বিষয় যে এই ব্যাপারটি পরবর্তী হাজার বছরেরও বেশি সময় ধ’রেমানুষের স্মৃতিতে রয়েছে, কারণ পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে যে অনেক খ্মের এবং খারমে রাজারা ক্ষমতায় আসেন তাঁদের মাতৃবংশের সূত্রে। ফলে এই ব্যাপারটি সংস্কৃতিতে প্রোথিত হয়ে গিয়েছে এবং এই কাহিনীটি এমন একটি চাবিকাঠির মতো মিথকথা হয়ে গিয়েছে যার উপর দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সংস্কৃতির অনেকটাই দাঁড়িয়ে। এই সংস্কৃতি মাতৃকুলভিত্তিক, কিন্তু সর্প-বিগ্রহত্বও রয়েছে।
অতএব, দেখাই যাচ্ছে সর্বত্র, এমনকি উত্তর মালয়েশিয়াতেও, একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান রয়েছে যার নাম বুজঙ্গ উপত্যকা, সেই জায়গায় যেখানে কাদারামের রাজত্ব ছিল। এবারে ভাবুন, একে বলা হয় বুজঙ্গ উপত্যকা, বুজঙ্গ মানে সাপ, অর্থাৎ সর্প উপত্যকা, এবং এই নামটি সর্বত্র পাওয়া যায়। পরে, অনেক অনেক পরে, যখন চোলরাজারা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্যের জন্য বন্দর তৈরি করবেন, সেই বন্দরকে কি নামে ডাকা হবে? নাগপট্টিনম নামে ডাকা হবে।