এখন রিচার্ড ঈটন এমন কথা বলেছেন। তিনি একজন আমেরিকান এবং স্বঘোষিত কমিউনিস্ট অ্যাকাডেমিক এবং তিনি দাবি করেন যে হিন্দুরা যথেচ্ছ মন্দির ধ্বংস করেছে এবং এটাই তাদের চরিত্রগত খুঁত। বাস্তবে তিনি কিছুতেই এমন কোনো উদাহরণ খুঁজে পান না, স্রেফ হাতে গোনা কয়েকটা ঘটনা ছাড়া যেখানে হিন্দুরা মন্দির ধ্বংস করেবি, বরং মন্দিরের প্রতিমাটি অপহরণ করেছে। কিছু ক্ষেত্রে প্রতিমাটি নিজের অধিকারে রাখা একটা অহংকারের বিষয় ছিল, কখনো সেটি শিল্প হিসেবে অমূল্য ছিল ইত্যাদি। আর তাই শাসকরা সেটি হাতাতে চাইতেন এবং তাই নিয়ে যুদ্ধ লাগত। শেষমেশ দেখা যেত প্রতিমাটি অপহৃত হয়েছে, যেটা কিনা পরে বিজয়ী রাজার মূল মন্দিরে স্থান পেয়েছে এবং যে মন্দিরে সেই প্রতিমাটি পূর্বে ছিল তার কোনো ক্ষতি করা হয়নি, এবং অবশ্যই যে যুদ্ধে হেরে গেছে সেই রাজা তাঁর মন্দিরে একটি নতুন বিগ্রহের প্রতিষ্ঠা ক’রে একইভাবে পূজা-অর্চনা চালিয়ে যেতে পারতেন।
ফলে, এই ব্যাপারটা এস্কিমোদের মূর্তিবিদ্বেষের থেকে একেবারে আলাদা ছিল, যার উদ্দেশ্য ছিল একেবারেই অবমাননা করা এবং শেষ অব্দি পরাজিতের ধর্মটিকে উচ্ছেদ করা, আর তাই তার পূজার স্থানটিকে ধ্বংস করবার উদ্দেশ্য বিগ্রহ চুরি করা কিংবা পূজার স্থানটিকে দখল করে সেগুলির পূজা চালিয়ে যাওয়া মোটেই ছিল না, অন্ততঃ আমি তো এমনটা কখনোই শুনিনি। এটা অনেকটা এস্কিমোরা সোমনাথ মন্দির ধ্বংস ক’রে শিবলিঙ্গটিকে এস্কিমোদের কোনো এক দেবস্থানে নিয়ে গিয়ে পুজো-আচ্চা চালিয়ে যাচ্ছে এমনটা বলার মতো শোনাবে। আমার জানা নেই, হয়তো এমন কোনো আজব এস্কিমো দেবস্থান পাওয়া গেলেও যেতে পারে যেখানে তারা সত্যিই কোনো একটি বিগ্রহের পূজা করে। তবে এ যাবৎ সংজ্ঞানুযায়ী এমন কিছু ঘটবে ব’লে আমার মনে হয় না। ফলে আমরা দেখতে পাচ্ছি যে একটা বড় সময় জুড়ে ভারতে প্রতিমাপূজার প্রতি বিদ্বেষের ব্যাপারটাকে অস্বীকার করবার অথবা ঢেকে ফেলবার চেষ্টা চলেছে, অর্থাৎ প্রতিমাবিদ্বেষকে খুব লঘু ক’রে দেখানোর চেষ্টা করা হয়েছে। অযোধ্যা বিতর্কের চরমতম দিনগুলিতে অনেক ধর্মনিরপেক্ষতাবাদী গালগল্পে এমনও দাবি করা হয়েছে যে প্রতিমাবিদ্বেষ কখনোই ছিল না, খুব কম লোকেই এতখানি দাবি করতে সাহস করবে।
তাই, এখন যে গল্পটা চালানো হয় তা হচ্ছে ব্যাপারটাকে যথাসম্ভব কম ক’রে দেখানো। হ্যাঁ ঠিক আছে এমনটা বারকয়েক ঘটেছিল, একে তো হিন্দুরা এসব নিজেরাই ডেকে এনেছিল আর তাছাড়া এটা এমন কিছু বড় আকার নেয়নি। তবে যে জিনিসটা বড় আকার নেয়নি সেটাও আপনাদের তলিয়ে দেখা দরকার। যেমন ধরুন, ঈটন মাত্র একটি প্রতিমাবিদ্বেষের ঘটনা স্বীকার করেছেন যেখানে মহম্মদ ঘোরী অথবা তার সেনাপতির সৈন্যরা ১১৯৪ সালে বারাণসী জয় করেছিল। এবার, আপনাকে যেতে হবে এর ফুটনোটে যেখানে বলা হচ্ছে যে হ্যাঁ, এটি একটি প্রতিমাবিদ্বেষের ঘটনা। তবে তিনি নিজেই দাবি করছেন যে এক হাজার মন্দির ধ্বংস করা হয়েছিল, এদিকে ওঁর দেওয়া পরিসংখ্যানের উপর ভিত্তি ক’রে ভারতীয় ধর্মনিরপেক্ষাতাবাদীরা আজকাল দাবি করেন যে ভারতে প্রায় আশিটির মতো মন্দির ধ্বংসের ঘটনা গত এক হাজার বছরে ঘটেছে, এক হাজার বছর ধ’রে তাও আবার গোটা ভারতবর্ষে। ফলে, এখানে আশিটির অর্থ আসলে আশিটি নয় কারণ কেউ একটা মাত্র ঘটনায় এক হাজার মন্দির ধ্বংস করা হয়েছে এমনটা ধরে নিতেই পারেন। প্রতিমাবিদ্বেষের একটিমাত্র ঘটনায় এক হাজার মন্দির ধ্বংস হয়ে গেলেও সেটা খুবই ছোট একটা সংখ্যা। গিলগিট বাল্টিস্তানের মতো জায়গা, যেখানে জনসংখ্যা খুবই কম, সেখানেও মাত্র এক দশকে আশিটি মন্দির ধ্বংস করা হয়েছে। ফলে, গোটা ভারতবর্ষের পরিপ্রেক্ষিতে এবং এক হাজার বছরে সংখ্যাটা নিশ্চয়ই তার চেয়ে বেশিই হবে।