কাজেই এইসব অনুষ্ঠানগুলি একটি ইতিবাচক মনোভাব তৈরি করে এবং এর সঙ্গে এই ব্যাপারটিকেও যোগ করুন যে, হিন্দুরা এটা স্বীকার করে নিয়েছে যে তাদের দেবীরা ঋতুচক্রের মদ্যে দিয়ে যান এবং তাঁদের সম্মানে তারা উৎসব পালন করে। কামাখ্যা নামে একটি উৎসব রয়েছে, যা আসামে বহুল প্রচলিত। এই কামাখ্যা উৎসবে, আমার মনে হয় একে অম্বুবাচী বলা হয়, দেবীর বাৎসরিক ঋতুচক্র তিন দিন ধ’রে চলে এবং তাঁকে বিশ্রাম করতে দেওয়া হয়।ওড়িশায় হরচণ্ডীর প্রতি উৎসর্গীকৃত আরেকটি উৎসব দেখতে পাবেন যার নাম রজঃ।এই উতসবের নামটাই রজঃ, অর্থাৎ ঋতুস্রাব, এটি ওড়িশায় পালিত হয়। এছাড়া ভারতে আমাদের আরও কয়েকটি উৎসব পালিত হয়, ভূমিদেবীরউদ্দেশ্যে। বছরে যে ক’দিন ঋতুচক্র স্থায়ী হয় সে ক’দিন তাঁর আরতি চলে। এমনটা কর্ণাটকেও হয়ে থাকে। কর্ণাটকে টুলু সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রচলিত এই উৎসবকে বলাহয় কেডাসা। তাহলে কে…হিন্দু ধর্মে কি এমন কোনো দেবতা আছেন যিনি ঋতুচক্রের অধিষ্ঠাতা? হ্যাঁ, তিনি হলেন পার্বতী অথবা দুর্গা। এমনকী, আমি যে ধর্মসিন্ধুতে ঋতুকাল সংস্কারের কথা বললাম, সেটি চলাকালীন যেসব নিয়ম পালন করবার কথা বলা আছে তার মধ্যে গৌরীর পূজা অন্যতম, দেবী গৌরীর পূজার পরে পার্বতী অথবা দুর্গার কথা চলে আসে যিনি এর সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। এইমাত্র আমরা দেখলাম নবরাত্রিতে নয় দিন নয় দেবীর উদ্দেশ্যে উৎসর্গীকৃত, এঁরা হলেন দেবী দুর্গার নয় রূপ, তাই না? শৈলপুত্রী, ব্রহ্মচারিণী, চন্দ্রঘণ্টা, প্রথম পাঁচটি রূপ একটি মেয়ের জীবনের পাঁচটি পর্বের সঙ্গে জড়িত।
- শৈলপুত্রী – কন্যাসন্তান, পর্বতের কন্যা।
- ব্রহ্মচারিণী –ব্রহ্মচর্য, কন্যা, ইনি ঋতুচক্রের অধিষ্ঠাত্রী দেবী। তিনি আদ্যঋতুর (একটি মেয়ের প্রথম ঋতুস্রাব) দেবী।
- চন্দ্রঘণ্টা – বিবাহ, তিনি তাঁর স্বামী শিবের মতোই চন্দ্র ধারণ করেন, কারণ তিনি শিবকে বিবাহ করেন, তাঁর সঙ্গে একীভূত হয়ে যান, তাঁর অর্ধাঙ্গিনীতে পরিণত হন। তারপর
- কুষ্মাণ্ড – অণ্ড সূচিত করে গর্ভধারণ প্রক্রিয়াটিকে, যথা ব্রহ্মাণ্ড, কুষ্মাণ্ড ইত্যাদি, এবং
- স্কন্দমাতা – গর্ভধারণের পরে আসে মাতৃত্ব
কাজেই এই গোটা ব্যাপারটি, পুরো বিষয়টির সঙ্গে দৈবী আধ্যাত্মিকতা জড়িয়ে আছে। এটি একটি জৈব প্রক্রিয়া, অবশ্যই, তদুপরি এটি একটি দৈব প্রক্রিয়া। এটি বিভিন্ন দেবতাদের দ্বারা চালিত হয়।